হ্যাম এমন ধরনের একটা জিনিস যেটা সম্পর্কে সবাই জানে না কিন্তু যে জানে সে আসলেই মিস করতে চায় না। আমি একটা অদ্ভুত শখের কথা বলতে এসেছি। অদ্ভুত শখের কাজ হল কথা বলা আর কথা শোনা। কারো মনে হতে পারে, কথা তো আমরা বলিই। তাহলে এটা শখ কিভাবে হল? জানতে ইচ্ছে করলে ধৈর্য ধরে থাকুন। এক্ষুনি বলছি আশ্চর্য এই শখের কথা।
আপনারা যারা স্ট্রেঞ্জার থিংস নামে ওয়েব সিরিজ নেটফ্লিক্স এ দেখেছেন, ডাস্টিন নামের কোকরা চুলের ছেলে এক ধরনের রেডিও ডিভাইস দিয়ে তথ্য পাঠায় নিশ্চই দেখেছেন? এই রেডিও ডিভাইস নিয়ে যারা কথা বলে তারা এমেচার রেডিও অপারেটর বা হ্যাম রেডিও অপারেটর। আর এই শখের নাম এমেচার রেডিও।
এমেচার রেডিওর সবচেয়ে মজার কাজ হল ওয়্যারলেস রেডিও ডিভাইস দিয়ে দূরে বন্ধুর সাথে কথা বলা। আবার শোনা। সেই সাথে টুকটাক বৈজ্ঞানিক কাজ করা, আবার সেই বৈজ্ঞানিক কাজ গুলো সারা বিশ্বের হ্যাম বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। কিছু মজার কাজের লিস্ট করে দিচ্ছি।
১. রেডিও ডিভাইস এ কথা বলা এবং শোনা।
২. নিজের একটা স্টেশান বানানো এবং চমৎকার বৈজ্ঞানিক কাজ করা। যেমন বিভিন্ন রেডিও ডিভাইস বানানো, এন্টেনা বানানো সেগুলো চেক করা মাঝে মাঝে প্রোগ্রামিং করা।
৩.দূর্যোগের সময় যেমন ভূমিকম্প, বন্যা এসব সময়ে যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে তখন ছোট ছোট ডিভাইস দিয়ে একটা কমিউনিকেশান সিষ্টেম দাড় করিয়ে ফেলা যেন সরকার বুঝতে পারে কেমন সহায়তা লাগবে। এবার সিলেটে বন্যার সময় চমৎকার কাজ করেছে বাংলাদেশের এমেচার রেডিও অপারেটররা।
৪. দেশে এবং বিদেশে কমিউনিটি গড়ে তোলা। হ্যাম রেডিও অপারেটর রা বিভিন্ন পেশার হন। এই শখে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, ফটোগ্রাফার, বৈজ্ঞানিক,ব্যবসায়ী, এবং সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সহ অনেকেই আসেন। কাজেই এই কমিউনিটিতে বিভিন্নধরনের দক্ষ মানুষ জন দের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। এছাড়া বিদেশের বিভিন্ন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হবার ফলে বিভিন্ন গিফট থেকে শুরু করে অনেক কিছু শেখা যায়।
৫.শখের মাঝে শখ যেমন মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশানের সাথে কথা বলা, নিজের বানানো বিভিন্ন জিনিস টেস্ট করা, রবোট, ক্যাম্পিং, ট্রেকিং বা দলবেঁধে ঘুরতে চলে যাওয়া।
৬.ফক্স হান্টিং। এই জিনিসটা সারপ্রাইজ। কেউ এতটুকু পর্যন্ত লেখা পড়ে থাকলে আপনার জন্য টাস্ক ফক্স হান্টিং কি খুজে বের করুন।
৭.এমেচার রেডিও অপারেটর রা কিন্তু একটা দেশের অঘোষিত রাষ্ট্রদূত। এই যে রেডিও ডিভাইস ইউজ করবেন এটার কোন লিমিটেশান নেই। বা সিম যেভাবে আমরা ইউজ করি যেমন একটা টাওয়ার এর সাথে আমাদের আগে কমিউনিকেশন হয় রেডিও ডিভাইস নিজেই একটা টাওয়ার।কথা বলতে কোন টাকা লাগে না কিন্তু কথা বলার কিছু রুলস রেগুলেশন আছে। একটা দেশের হ্যাম রেডিও অপারেটর রা দেশের সবচেয়ে স্মার্ট মানুষ। অনেক দেশের মানুষ কিন্তু আপনাকে দেখে আপনার দেশ সম্পর্কে জানবে।
৮.বেশ কয়েক ধরনের ডিভাইস দেখতে পারবেন হ্যাম হলে। যেমন VHF, UHF,HF. VHF আর UHF অল্প দূরত্বে কথা বলার জন্য আর HF পুরো ওয়ার্ল্ড এর সাথে কথা বলার জন্য। চমৎকার এই ডিভাইস গুলো নেড়েচেড়ে দেখেই সারাদিন কাটিয়ে দেয়া যায়।
তবে এই চমৎকার কাজ গুলো করতে চাইলে সরকার থেকে লাইসেন্স এর দরকার হয়। বিনা লাইসেন্স এ বাংলাদেশে রেডিও ডিভাইস ইউজ করলে ১০ বছরের জেল সহ কোটি টাকা ফাইন করার আইন আছে। তাহলে বুঝতেই হবে ব্যাপারটা কতটা বিশাল।কাজেই লাইসেন্স এর জন্য পরীক্ষা দিয়ে, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সহজেই লাইসেন্স পাওয়া যায়, এবং বিশ্বের সাথে এক অদ্ভুত চমৎকার শখে মিশে যাওয়ার সোনালী দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে।বিভিন্ন জল্পনাকল্পনা শেষে আবারো বাংলাদেশে হ্যাম রেডিওর লাইসেন্স পরীক্ষার আয়োজন হতে যাচ্ছে কিন্তু।
এই রেডিও ডিভাইস গুলোতে কথা বলতে কিন্তু কোন টাকা দিতে হয় না। লাইসেন্স পাওয়ার পর যারা এমেচার রেডিও অপারেটর হয়ে যান, উনাদের জন্য কলসাইন দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। এই কলসাইন পুরো বিশ্বে একটাই। এই কলসাইনে সবাই আপনাকে জানবে। যেমন S21HK আমার কলসাইন। আবার আমেরিকা তে আমার বন্ধু গ্রেগরি লি এর কলসাইন KI6GIG. বাংলাদেশের প্রচুর এমেচার রেডিও সেলিব্রেটি আছেন,যেমন S21TV,S21ED,S21KV,S21BK,S21PL,S21VE,S21CN,S21DI,S21DW, S21HD ইত্যাদি। সেলিব্রেটি বলছি কারন দেশ বিদেশে প্রচুর বন্ধু উনাদের। যখন যেই দেশে ঘুরতে যান রীতিমতো সেই দেশে এমেচার রেডিও অপারেটর রা বসেই থাকেন বিভিন্ন সাহায্য, সহযোগীতা করার জন্য। S21RB কলসাইনে আমাদের পুরোনো একজন অপারেটর থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। সম্প্রতি DMR রেডিও নিয়ে অনেক এগিয়েছেন। আপনারা যারা হ্যাম হবেন এরপর DMR রেডিও নিয়ে এক দিন লম্বা গল্প করব। আমার স্টেশানে নিমন্ত্রণ রইল কিন্তু।
আমরা এমেচার রেডিও সোসাইটি অফ বাংলাদেশ বহুদিন থেকে শখের বিজ্ঞান চর্চা করে যাচ্ছি। এমেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও সারা পৃথিবীর খুব জনপ্রিয় একটা চর্চা যেখানে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সী থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট থেকে একদম স্পেস স্টেশন পর্যন্ত আমাদের বিচরণ। তাও পুরোটাই শখের বসে।
লেখাটি S21HK এর ফেইসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।